আহলান সাহলান মাহে রমজান, মাহে রমজান

 আহলান সাহলান মাহে রমজান, মাহে রমজান

শুভেচ্ছা স্বাগত মাহে রমজান, মাহে রমজান।

খোশ আমদেদ মাহে রামাজান, মাহে রমজান।

প্রতিবারের মতই রহমত, মাগফিরাত নাজাতের সুসংবাদ নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে এল মাহে রমজান তথা পবিত্র রামযান মাস। শুভ আগমন পবিত্র রামযানুল মুবারাকের, মাহে রামাযান, মাহে মোবারক।

     আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর শিখানো দোয়া আমরা চন্দ্র মাস রজব শাবান দুই মাসব্যাপী পড়ে আসছি, ‘হে আল্লাহ, রজব শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান আমাদের নসিব করুন!’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২৫৯) মহান রব এই প্রার্থনা কবুল করলেন। তাই সবাই বলছিআহলান সাহলান মাহে রমজান, স্বাগত রমজান মাস

     লাখো-কোটি কল্যাণ আর মুক্তির সওগাত নিয়ে আমাদের মাঝে সমাগত পবিত্র রামযানুল মুবারাক প্রকৃত অর্থেই রামাযান মাস একজন মুসলিম বান্দার জন্য আল্লাহপাকের নেয়ামত করুণা লাভের এক মহাকল্যাণকর উত্তম মওসুম। মাস মহা পবিত্র কুরআন মজিদ নাযিলের মাস, জান্নাত লাভের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস, তাকওয়া অর্জনের মাস। অবারিত রহমতের বারিধারা বয়ে চলার মাস, অফুরন্ত কল্যাণের মাস রামাযান।

     তাই মুসলিম সকল বান্দার হৃদয় আনন্দ হিল্লোলে বিমোহিত, মহান রবের সান্নিধ্য লাভের উন্মাদনায় শিহরিত, জান্নাত লাভের অতি বাসনায় আনন্দিত, উদ্বেলিত রামাযানের কোটি পূণ্যলাভের আঙ্খাকায়।

    সিয়াম সাধনায় সাওম পালনের রামাযান মাস ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা তথা চন্দ্র মাস অনুসারে নবম মাস, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম।

     আরবি শব্দ 'সওম'-এর শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তে পানাহার সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম 'সওম' সওম-এর বহুবচন হচ্ছে সিয়াম। উর্দু বা ফারসিতে রোজা।

     ইসলামী শরীয়তের হুকুম মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর সাওম পালন ফরয।

     কিন্তু সফরকারী, অসুস্থ, গর্ভবতী, রোগী, ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। ঋতুমতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তি সফরকারীরা এই রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা সকল গুনাহের কাজ এবং যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। ছাড়াও চুপ থাকা, নিরবতা পালন, সংযম অবলম্বন, নিস্তব্ধতাও সিয়াম পালনের অন্তর্ভুক্ত।

     পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন:

হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরযাতে তোমরা মুত্তাক্বি হতে পার।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

     রামজান মাস, এতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারী এবং ষ্পষ্ট নিদর্শন সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

     মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন:

'সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।' (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৫)

     আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

'আর আহার করো পান করো যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। এরপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।' (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৭)

     আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করো না। (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৭)

     প্রিয় নবী (সা.) বলেন, বুখারি শরীফ: হাদিস নং-৩৭: আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

     প্রিয় নবী (সা.) বলেন, বুখারি শরীফ: হাদিস নং: ১৯০৯; মুসলিম শরীফ হাদীস নং: ১০৮০ 

যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।

     মুসলিম শরীফ: হাদীস নং:- ২৩৮৫-(/১০৭৯) : আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং আযাজিল শয়তানের দোষর শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৩৬২, ইসলামীক সেন্টার ২৩৬৩)

     রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, খণ্ড: , হাদিস: ,৭৭৫)

     আসছে ইবাদতের মৌসুম পবিত্র রামজান। রামজান বান্দার প্রতি আল্লাহ পাকের অনন্য উপহার। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যেমন সারা বছরের লোকসানে বিশেষ বিশেষ মৌসুমে লাভের অংশে পুষিয়ে নেই, ঠিক তেমনিভাবে ইবাদতের কিছু লাভজনক মৌসুমে গোনাহগার বান্দা কাজে লাগিয়ে আখিরাতের জন্য প্রচুর পরিমাণে নেকি উপার্জন করে। মুসলিম গোনাহগার বান্দাসহ মুমিন বান্দাদের রামজান মাসই তেমনই একটি লাভজনক ইবাদাতের মৌসুম।

     ইবাদতের এই অভাবনীয় লাভজনক মৌসুমের ফসল হিসাবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ফরজ সিয়াম-সাধনা, ফরজ সালাত আদায়সহ ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবির সালাত আদায়, পবিত্র কোরআন খতম, তাসবিহ তাহলিল, মুক্তহস্তে দান করা, সম্ভব হলে রোজাদারদের ইফতারি খাওয়ানো, সময়ের মূল্যায়ন করে রাতে তাহাজ্জুদ গোজারসহ মহান রবের নিকট কান্না কাটি করে নিজেকে ইবাদাতে মশগুল রেখে ফজিলতের মাস রামজান কাটুক  

    পূর্ণ এক মাস সিয়াম রাখা একটি ফরজ, রামাজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি ওয়াজিব, যথা: সদকাতুল ফিতর প্রদান করা এবং ঈদের নামাজ আদায় করা।

    অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা, রমজানের চাঁদ দেখা; সাহ্রি খাওয়া, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা, ইফতার করা করানো, ২০ রাকায়াত তারাবিহর সালাত আদায় করা, ইতিকাফ করা; রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে ক্বদর সন্ধান করা এবং ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সকল মুসলিম বান্দার জন্য সুন্নাত।

     বিলাস ভূজন বর্জনসহ সেহরীতে-ইফতারীতে মাছ, মাংস, দুধ, দই অপচয়ের বাড়তি আইটেম নয়- স্বাভাবিক পানাহার গ্রহণ করি। সিয়ামের কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট ভুলে যায়। পানাহারে সংযম গ্রহন করে ঈদের বাজার, নতুন পোষাকসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দরিদ্র, অসহায়, মানুষদের পাশে দাড়াঁই। তখনই মনে আসবে ঈদ। ঈদের খূশি। ঈদ আল ফিতর বা দানের মহোৎসব। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি নৈকট্য লাভের আশায় মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে ধর্মপ্রাণ অর্থশালী মুসলমানগণ ধনী-দরিদ্রের মহামিলনের বার্তা বহন করি ঈদ্যোৎসব মাধ্যমে।

     একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষও এই উৎসবের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের আরো কাছাকাছি আসে। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষের সঙ্গেও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।

    পবিত্র রমজান আমাদের অত্ম-শুদ্ধির শিক্ষা দেয়, দেয় ধনী-গরিব এক কাতারে আসার শিক্ষা। উৎসব আমেজের আনন্দ ভাগাভাগি ঈদ। ঈদ মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, সৌহার্দ, সম্প্রীতি এবং সৌভ্রাতৃত্বেরও। সব ধরনের বিদ্বেষ-হানাহানি, হিংসা বৈষমের ভেদাভেদ ভূলিয়ে দেয়। ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রীয় জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক! আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহাদ্য সম্প্রীতিতে ভরে উঠুক প্রতিটি মুমিনের জীবন।

     হে আল্লাহ, আমাদের সিয়াম-ক্বিয়াম, ত্যাগ সংযম কবুল করুন আমিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post