মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اعۡبُدُوۡا رَبَّكُمُ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ وَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿ۙ۲۱﴾
২ : ২১ঃ হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। আল-বায়ান
২১. হে মানুষ(১)! তোমরা তোমাদের সেই রব-এর(২) ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববতীদেরকে সৃষ্টি করেছেন(৩), যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও(৪)।
১. আরবী ‘নাস’ মানে মানুষ । এতে পূর্বে আলোচনায় মুমিন-কাফির ও মুনাফিক এ তিন শ্রেণীই অন্তর্ভুক্ত।
তাওহীদ ও ইবাদাত
ইবাদাতের আভিধানিক অর্থ নম্র ও অনুগত হওয়া;
শরীআতের পরিভাষায় ইবাদাত হচ্ছেঃ আল্লাহ্ তা'আলা ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন এমন সব প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজের ব্যাপক একটি নাম। এ সমস্ত কথা ও কাজ পরিপূর্ণ ভালবাসা ও পরিপূর্ণ বিনয়ের সাথে আল্লাহর জন্য আদায় করলেই তা আমাদের পক্ষ থেকে ইবাদাত বলে গণ্য হবে।
ইবাদাতের ভিত্তি তিনটি রুকনের উপর স্থাপিত।
এক. আল্লাহ্ তা'আলার জন্য পরিপূর্ণ ভালবাসা পোষণ করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ভালবাসে [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৬৫]
দুই. পরিপূর্ণ আশা পোষণ করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “এবং তারা তার দয়া প্রত্যাশা করে”। [সূরা আলইসরাঃ ৫৭]
তিন. আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে ভয় করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “এবং তারা তার শাস্তিকে ভয় করে”। [সূরা আল-ইসরাঃ ৫৭]
মানুষ যত মূৰ্খই হোক এবং নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তি যতই হারিয়ে থাকুক না কেন, একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে যে, পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকা ও লালন-পালনের সকল দায়িত্ব নেয়া আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহীদ বিশ্বাস।
তাওহীদ শব্দটি মাসদার বা মূলধাতু। যার অর্থ- কোন কিছুকে এক বলে জানা এবং ঘোষণা করা।
আল্লাহর একত্ববাদ অর্থ- আল্লাহ যে এক তা ঘোষণা করা। শরীআতের পরিভাষায় তাওহীদ বলতে, আল্লাহ তা’য়ালাই একমাত্র মা’বুদ বলে বিশ্বাস করা; তাঁর কোন শরীক নাই। সমকক্ষ নাই।
একমাত্র তাঁর দিকেই যাবতীয় ইবাদাতকে সুনির্দিষ্ট করা। তাঁর যাবতীয় সুন্দর নাম ও গুণাবলী আছে বলে বিশ্বাস করা।
এতে বুঝা গেল যে, তাওহীদ হলো আল্লাহকে রবুবিয়াত তথা প্রভূত্ত্বে, তার সত্তায়, নাম ও গুণে এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে একক সত্তা বলে স্বীকৃতি দেয়া।
তাওহীদ বিশুদ্ধতায় তিনটি অংশ অবশ্যই থাকতে হবে -
(১) আল্লাহর প্রভূত্বে ঈমান ও সে অনুসারে চলা। যা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ নামে খ্যাত।
(২) আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে ঈমান আর সেগুলো তার জন্যই নির্দিষ্ট করা। যাকে তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত বলা হয়। আর
(৩) যাবতীয় ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা। যাকে তাওহীদুল উলুহিয়াহ’ও বলা হয়।
৪. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করলেই তাকওয়ার অধিকারী হওয়া যাবে নতুবা নয়। জীবনের যাবতীয় ইবাদাতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য খালেসভাবে করতে হবে।
সূত্র: তাফসীরে জাকারিয়া ।